কিডনি রোগ প্রতিরোধে যা খাবেন যতটুকু খাবেন

কিডনির প্রধান কাজ হলো শরীর থেকে সব বর্জ্য বের করে দেওয়া, শরীরে পানি ও মৌলিক পদার্থের ভারসাম্য রক্ষা, ভিটামিন ডি ও আমিষের বিপাক ঘটানো ইত্যাদি।
কিডনি রোগ ভয়াবহ হলেও একটু সচেতন হলেই এ রোগ প্রতিরোধ যোগ্য।

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনির ছাকনির প্রদাহ ছাড়াও বংশগত কারণে, জন্মগত সমস্যা, কিডনিতে পাথর, মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ, প্রস্রাব প্রবাহে বাধা, ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান, মদপান এসব কারণে কিডনির সমস্যা শুরু হতে পারে।

সঠিক নিয়ম মেনে না চললে ও খাদ্যাভ্যাস যথাযথ না হলে, এমনকি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের প্রভাবেও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু খাবার আপনার খাদ্যতালিকায় রেখে সহজেই ক্রিয়েটিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও কিডনিকে সুস্থ রাখতে পারেন।

কিডনি রোগীদের জন্য অন্য রোগীদের তুলনায় একটু বেশি ক্যালোরি নির্ধারণ করা হয়। প্রতি কেজি ওজনের জন্য কার্বোহাইড্রেট থেকে পরিমাণ ৩০ থেকে ৩৫ ক্যালোরি হয়ে থাকে। ভাত/ রুটি (ময়দার বা চালের) চিড়া/ সাগু/ চালের সুজি ইত্যাদি কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ কিডনি রোগীর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম প্রোটিন রোগীভেদে ডায়েটে দেওয়া হয়ে থাকে। প্রাণীজ প্রোটিন থেকে রোগীর প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা হয়ে থাকে। ডিমের সাদা অংশ, মুরগির বুকের মাংস, দুধ বা দই থেকে নিদিষ্ট পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।

মাছে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ফ্যাট ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছ রেখে সহজেই এড়াতে পারেন কিডনির সমস্যা। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যালমন ও টুনাতে রয়েছে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড।

আমাদের মনে রাখতে হবে ৩০ গ্রাম প্রোটিন মানে ৩০ গ্রাম মাছ, মাংস বা ডিম নয়। যেমন একটি ডিমের সাদা অংশ থেকে আমরা মাত্র ৩.২ গ্রাম প্রোটিন পেয়ে থাকি।

ফলের ক্ষেত্রে দিনে আপেল, নাসপাতি , পেয়ারা ও পেঁপে যে কোনো একটি এক কাপ পরিমাণ খেতে পারেন।

শাকসবজির পরিমাণও প্রতিবেলায় এক কাপ রাখতে পারেন, সঙ্গে পর্যাপ্ত সালাদ। প্রায় সব ধরনের সবজি খেতে পারলেও, পিউরিন ও উচ্চ পটাশিয়াম যুক্ত সবজি যেমন ফুলকপি, মটরশুটি, টমেটো, ঢেড়শ, কচুরলতি আরও বেশ কিছু সবজি কিডনি রোগীদের না খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে দেড় লিটার পানি রোগীকে বরাদ্দ করা হয়। যা পানি, চা, দুধ সব মিলিয়ে হিসেব করতে হবে।

কিডনি রোগীর সোডিয়ামও নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। সাধারণত প্রতিদিন ২ থেকে ৫ গ্রাম লবণ গ্রহণ করতে পারেন। ১ চামচ সমান ৫ গ্রাম।

রোগীর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপলিমেন্ট বা  ইঞ্জেকশন নিতে হতে পারে। তবে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য না জেনে কখনোই কোনো খাবার গ্রহণ করা উচিত না।

প্রত্যেক কিডনি রোগীর জন্য যদিও স্বতন্ত্র ডায়েট – তারপরও কিছু খাবার আছে যা সব কিডনি রোগীকেই পরিহার করতে বলা হয়। যেমন: ডাল, কোল্ড ড্রিংকস, আঁচার, গরু, খাসীর মাংস, ভাজাপোড়া খাবার, কফি, চানাচুর, পাপড়, বাইরের কেনা খাবার ও বাসি খাবার ইত্যাদি।

রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে রোগীর ওজন, বয়স ও শারিরীক অবস্থার বিবেচনা করে ডায়েট নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে একজন ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লেখা: তামান্না চৌধুরি
পুষ্টিবিদ, এভারকেয়ার হাসপাতাল।

About GANESH BAIDYA

Check Also

পালং শাক কেন চুলের জন্য ভালো?

সবাই ঘন, ঝলমলে চুল পছন্দ করে, তাই না? তবে আআজকাল চুল পড়া এবং পাতলা হওয়া …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *